ঢাকা ১৭ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
ইঞ্জিনের যান্ত্রিক ত্রুটিতে পথে থেমে গেল মধুমতি ট্রেন অতি ভারী বৃষ্টির আভাস, সমুদ্র বন্দরে সতর্ক সংকেত অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে আজও বিক্ষোভ শেখ হাসিনাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে আবারও বিক্ষোভ বাস-কাভার্ডভ্যানের সংঘর্ষে বাবা-ছেলেসহ নিহত ৩, আহত ১০ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব চিন্ময় কৃষ্ণকে জেলগেটে এক দিনের জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ প্রথমবার ঢাকায় জাতিসংঘের গুমবিষয়ক প্রতিনিধি দল ঈদযাত্রার ১৫ দিনে সড়কে নিহত ৩৯০ জন

রেল দেখতে বিদেশ যেতে চান এমপিরা

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ মে, ২০২২,  1:59 PM

news image

অভিজ্ঞতা অর্জনে বিদেশ যেতে চান রেল মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। রেলওয়ের কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হয়, তা পরিদর্শনে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান কিংবা চীনে যেতে চান কমিটির সদস্য এমপিরা। গত ১৫ মার্চ স্থায়ী কমিটির ১৯তম সভায় এ সুপারিশ করেছে কমিটি। আজ মঙ্গলবার ২০তম সভা অনুষ্ঠিত হবে।

আজকের সভার কার্যপত্রেও এমপিদের বিদেশ ভ্রমণের বিষয়টি রয়েছে। চট্টগ্রাম-৬ আসনের এমপি তথা কমিটির সভাপতি এ.বি.এম. ফজলে করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ১৯তম সভায় সুপারিশ করা হয়, অভিজ্ঞতা অর্জনের লক্ষ্যে পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর কোরিয়া, জাপান কিংবা চীনে স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের পরিদর্শনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে। রেলপথ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কারোনার কারণে সংশ্নিষ্ট দেশগুলোতে এখনও ভ্রমণে বিধিনিষেধ রয়েছে। বিধিনিষেধ শিথিল হলে ভ্রমণের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের বক্তব্য জানতে পারেনি সমকাল। কমিটির সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি সংসদে তার কার্যালয়ে দেখা করে কথা বলতে বলেন। রেলের কর্মকর্তারাও কথা বলতে রাজি হননি। রেলওয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, এমপিদের ভ্রমণের বিষয়ে কথা বলা তার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না।

২০১৯ সালের আগস্টে আট সদস্যের প্রতিনিধি দল রেলমন্ত্রীর নেতৃত্বে চীন সফর করে। সেই সফরে বিভিন্ন স্টেশন, রোলিং স্টক কারখানা, ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট ডিপো পরিদর্শন, ট্রেন অপারেশনাল কন্ট্রোল সেন্টার, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিআরইসির কারখানা, দ্রুতগতির রেল ব্যবস্থাপনা পরিদর্শন করে। সেই সফরে দ্রুতগতির ট্রেনে ভ্রমণ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করে দলটি। ওই সফরে মন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মাগুরা-১ আসনের এমপি মো. সাইফুজ্জামান শিখর এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি নাদিরা ইয়াসমিন জলি।

সাইফুজ্জামান শিখর বলেন, ১৯তম সভায় তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি। তাই তার জানা নেই, অভিজ্ঞতা অর্জনে বিদেশ ভ্রমণের সুপারিশ করা হয়েছে কিনা। এমপিদের বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে নানা সমালোচনা থাকলেও তা নাকচ করে তিনি বলেছেন, প্রকল্পের প্রয়োজনে সংসদ সদস্যরা যেতেই পারেন। এতে সরকারের টাকার সংশ্নিষ্টতা থাকে না। এমপিদের অনেকে আগ্রহী হয়ে নিজের টাকায় যান।

আড়াই বছর আগের চীন সফরের উদাহরণ দিয়ে সাইফুজ্জামান শিখর বলেছেন, বিদেশে অভিজ্ঞতা অবশ্যই হয়। অভিজ্ঞতা অর্জিত হলে স্থায়ী কমিটি মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করতে পারে। চীন ২০১২ সালে জাপান থেকে মাত্র ১৬ জোড়া বুলেট ট্রেন এনেছিল। এখন তাদের তিন হাজার ৬০০ দ্রুতগতির ট্রেন আছে। ২০০৯ সালে শুরু করে ১৫ হাজার কিলোমিটার দ্রুতগতির রেললাইন তৈরি করেছে চীন।

এগুলো এমপিরা দেখলে, কিছু উপকার তো হয়ই। সংসদীয় কমিটি তো মন্ত্রণালয়কে গাইড করার জন্যই। এমপিরা যদি কিছু না-ই জানেন, না বোঝেন, তাহলে মন্ত্রণালয়কে জবাবদিহিতার মধ্যে রাখবেন কী করে।

কমিটির আরেক সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি বলেন, রেল সংসদীয় কমিটির সদস্যরা তিন বছরে একটিও বিদেশ ভ্রমণ করেননি। কমিটির ১০ সদস্য মিলে একটি ভ্রমণ করতে চেয়েছিলেন। তার যুক্তি, সরকারি টাকায় এমপিরা বিদেশ যান না। যে দেশে রেলের কাজ চলছে, সেই দেশের টাকায় এমপিরা সফরে যান। এর আগের চীন সফর হয়েছিল সেই দেশের আমন্ত্রণে। রেলমন্ত্রী তার ছেলেকে নিজ খরচে নিয়ে গিয়েছিলেন সেই সফরে।

সরকারি কর্মকর্তাদের ভ্রমণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে নাদিরা ইয়াসমিন বলেন, 'সচিব, ডিজি, কর্মচারীরা বিদেশ যান। আমরা তো কোনো দেশে যাই না। আমাদের নেয় না। নেয় না মানে আমরা জানিও না। আমরা চেয়েছি, যেসব দেশের সঙ্গে আমাদের কাজ চলছে, যেখানে রেল অনেক উন্নত, সেখানে ভ্রমণ করলে আমাদের জন্যই ভালো হয়। আমরা কিন্তু হাউকাউ পার্টি না। হাউকাউ পার্টি হলো মন্ত্রণালয়ওয়ালারা। তারা সারাদিন যায় (বিদেশে)। সারাদিন ঘুরতেছে।'

রেলমন্ত্রী ছাড়া কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- নীলফামারী-২ আসনের এমপি আসাদুজ্জামান নূর, নাটোর-২ আসনের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল, ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল ইসলাম আজম খান, নোয়াখালী-১ আসনের এইচ এম ইব্রাহিম, কুমিল্লা-৮ আসনের নাছিমুল আলম চৌধুরী ও হবিগঞ্জ-১ আসনের এমপি গাজী মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ।

করোনাকালে বিদেশ সফর নিরুৎসাহিত করতে এ খাতে বরাদ্দ ৫০ শতাংশ কমিয়েছে সরকার। শুধু জরুরি ও অনিবার্য প্রয়োজনে বিদেশ ভ্রমণে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় করা যাবে। কিন্তু তাতেও বিদেশ সফর বন্ধ নেই। গত নভেম্বরে রেলমন্ত্রীর নেতৃত্বে তৎকালীন সচিবসহ আট সদস্যের প্রতিনিধি দল যুক্তরাজ্য, জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্স সফর করে। সেই সফরে রেলমন্ত্রীর খরচে তার স্ত্রীও সঙ্গী হন। পরের মাসে রাশিয়া সফর করেন। ওই সফরের সপ্তাহখানেক পর সাবেক সচিব সেলিম রেজা অবসরে গিয়েছেন। তার পাঁচ দেশ সফরে অর্জিত অভিজ্ঞতা কাজে লাগেনি সরকারের। এর পর গত মার্চে তুরস্ক সফর করেছে মন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল। সূত্র জানিয়েছে, স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠকে বলেছেন, মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা একের পর এক বিদেশ সফর করছেন। তাদেরও এ সুযোগ দেওয়া উচিত।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, বিদেশের আমন্ত্রণ হোক কিংবা ঋণের টাকায় বিদেশ সফর হোক, দিন শেষে তা জনগণের করের টাকা। তা দিয়ে অনর্থক বিদেশ সফর জনগণের করের টাকা অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। ঠিকাদারের খরচে বা প্রকল্পের বরাদ্দে বিদেশ ভ্রমণ বলে আসলে কিছুই নেই। সবই সরকারের টাকা। প্রয়োজন থাকলে অবশ্যই বিদেশ যেতে হবে। কিন্তু অতীতে যেসব সফর হয়েছে, তা কী কাজে এসেছে, সেগুলোও দেখা দরকার।

সংসদীয় কমিটির আজকের সভায় রেলের আয়-ব্যয় ও চলমান প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হবে। রেলের জমিতে হাসপাতাল, শপিংমল, হোটেলসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হবে। আগের সভার নির্দেশনা অনুযায়ী, মন্ত্রণালয় কমিটিকে জানিয়েছে বেসরকারি খাতে ট্রেন লিজ দিয়ে বছরে ৯৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা আয় হয়েছে।

logo
সম্পাদক ও প্রকাশক মো: মনিরুজ্জামান মনির