ঢাকা ১৭ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
ইঞ্জিনের যান্ত্রিক ত্রুটিতে পথে থেমে গেল মধুমতি ট্রেন অতি ভারী বৃষ্টির আভাস, সমুদ্র বন্দরে সতর্ক সংকেত অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে আজও বিক্ষোভ শেখ হাসিনাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে আবারও বিক্ষোভ বাস-কাভার্ডভ্যানের সংঘর্ষে বাবা-ছেলেসহ নিহত ৩, আহত ১০ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব চিন্ময় কৃষ্ণকে জেলগেটে এক দিনের জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ প্রথমবার ঢাকায় জাতিসংঘের গুমবিষয়ক প্রতিনিধি দল ঈদযাত্রার ১৫ দিনে সড়কে নিহত ৩৯০ জন

কবরস্থানের জমিতে হচ্ছে রেলের কনটেইনার টার্মিনাল!

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ মার্চ, ২০২২,  1:27 PM

news image

বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রামে ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। অবকাঠামো উন্নয়নে এরই মধ্যে মাটি পরীক্ষাসহ আনুষঙ্গিক কাজও শুরু হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামের সিজেপিওয়াই এলাকায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির একটি বড় অংশে রয়েছে কবরস্থান। নথিভুক্ত কবরস্থানে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রেলওয়ের কর্মীরা। তাদের অভিযোগ, আশপাশ এলাকায় রেলওয়ের বিপুল পরিমাণ জমি থাকা সত্ত্বেও টার্মিনালটি নির্মাণের জন্য কবরস্থানের জমি ব্যবহার করা হচ্ছে।

ব্রিটিশ আমল থেকেই রেলওয়ের কর্মীদের আবাসিক এলাকার জন্য বরাদ্দ রয়েছে কবরস্থানটি। বাংলাদেশ রেলওয়ে ও ভূমি অফিসের নথিপত্রেও স্থানটির জমিকে কবরস্থান শ্রেণীভুক্ত করা আছে। রেলওয়ের আবাসিক এলাকার এ কবরস্থানে প্রায় সাড়ে চারশ কবর থাকার কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের জন্য রেলওয়ে যে জায়গা নির্ধারণ করেছে, তার মধ্যে পড়েছে পুরো কবরস্থানটি।

গত বছর চট্টগ্রামের পোর্ট ইয়ার্ড এলাকার প্রায় ২১ একর জমির ওপর মাল্টি-মোডাল কনটেইনার টার্মিনাল কাম অফ-ডক নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের সঙ্গে চুক্তি করে সাইফ লজিস্টিকস অ্যালায়েন্স লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণ-পরবর্তী ২০ বছর টার্মিনালটি পরিচালনা করবে প্রতিষ্ঠানটি। এ সময়ে টার্মিনাল থেকে প্রাপ্ত আয় ভাগাভাগি করা হবে রেলের স্বতন্ত্র সংস্থা কনটেইনার কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিসিবিএল) সঙ্গে।

নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের মধ্যম হালিশহর মৌজার ২১ দশমিক ২৯ একর জমির ওপর তৈরি করা হচ্ছে কনটেইনার টার্মিনাল। এর মধ্যে ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ জমি কবরস্থান শ্রেণীভুক্ত। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রকল্পের ব্যবহূত পুরো জমির প্রায় চার ভাগের এক ভাগ একসময় রেলওয়ের কর্মীদের আবাসিক এলাকার কবরস্থান হিসেবে পরিচিত ছিল। বর্তমানে কবরস্থানের পরিসর কিছুটা ছোট হয়েছে।

সম্প্রতি কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের জন্য মাটি পরীক্ষাসহ আনুষঙ্গিক কাজ শুরু করেছে সাইফ লজিস্টিকস। কবরস্থানের ঠিক পাশেই মাটি ভরাটের কাজ করা হচ্ছে। মিজানুর রহমান নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বণিক বার্তাকে বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকেই বর্তমান প্রকল্প এলাকাটি কবরস্থান হিসেবে পরিচিত। রেলওয়ের নথিভুক্ত এসব ভূমির বেশির ভাগই একসময় কবরস্থান ছিল। বর্তমানে রেলওয়ে আবাসিকের মানুষ যে স্থানটিকে কবরস্থান হিসেবে সংরক্ষণ করছে, সেই স্থানে মাটি ভরাটের চেষ্টা করছে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান।

রেলওয়ের কর্মীদের অভিযোগ, প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন এলাকায় বাংলাদেশ রেলওয়ের বিপুল পরিমাণ জমি থাকলেও কবরস্থানের সঙ্গে সংযুক্ত জমিতে আইসিডি নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করেই চট্টগ্রামের অন্যতম বড় কবরস্থানে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ইজারা দেয়া হয়েছে। রেলওয়ের আবাসিক এলাকার কর্মীরা প্রতিবাদ করলেও কবরস্থানটি সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আবাসিক এলাকার কবরস্থানের জমিতে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণাও দিয়েছেন রেলওয়ের কর্মীরা।

স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন-২০১৭ অনুযায়ী, সাধারণভাবে ধর্মীয় উপাসনালয়, কবরস্থান ও শ্মশান হিসেবে ব্যবহূত কোনো ভূমি অধিগ্রহণ করা যাবে না। তবে শর্ত থাকে যে, জনপ্রয়োজনে বা জনস্বার্থে একান্ত অপরিহার্য হলে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত ব্যক্তি বা সংস্থার অর্থে স্থানান্তর ও পুনর্নির্মাণ সাপেক্ষে কেবল ওই সম্পত্তি অধিগ্রহণ করা যাবে। কিন্তু বর্তমান প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন এলাকাটি রেলওয়ের নিজস্ব সম্পত্তি হলেও কোনো ধরনের নিয়ম না মেনে কবরস্থানের জমিতে আইসিডি নির্মাণ করতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইজারা চুক্তি করেছে রেলওয়ে। কবরস্থানের কোনো বিকল্প না রেখেই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অনুমতি দিয়ে রেখেছে রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ।

বিকল্প না রেখেই কবরস্থানের ওপর কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ভূমি ইজারা দেয়ার বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমরা শুনেছি। রেলওয়ের কর্মীদের কবরস্থানের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন রেলওয়ে আবাসিকের বাসিন্দারা। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কীভাবে সংকট উত্তরণ করা যায় সে বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

logo
সম্পাদক ও প্রকাশক মো: মনিরুজ্জামান মনির